শিক্ষার্থীদের কিছু ভূল সিদ্ধান্ত যাতে সুযোগ পাচ্ছে সৈরাচার গোষ্ঠী-জেনে বুঝে শিক্ষার্থীদের মাঝে দ্বন্ধ লাগানোর পায়তারা।

 ১৬ বছর সিঙ্গারা খাওয়ার পর আবার যেন সিঙ্গারা না খেতে হয়।

একটি হোস্টেলে প্রতিদিন বিকালে টিফিন হিসাবে সিঙ্গারা খেতে দেওয়া হতো। প্রতিদিন সিঙ্গারা খেতে খেতে সিঙ্গারার প্রতি অনিহা তৈরি হলো। সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্ররা হোস্টেল সুপারের কাছে আবেদন করলো টিফিন পরিবর্তন করতে। আবার ২০ জন ছাত্র দাবী করলো টিফিন সিঙ্গারাই থাকতে হবে। হোস্টেল সুপার তখন বললো সবাই মিলে ভোট দেও টিফিন হিসাবে নাস্তা কি দিবো? যে আইটেম বেশি ভোট পাবে টিফিনে কালকে থেকে সেটাই দেওয়া হবে। আগের ২০ জন ভোট দিলো সিঙ্গারা। এবং পরের দিনের টিফিন আবারও সিঙ্গারাই পাশ হলো। 

প্রশ্ন আসতে পারে ৮০ জনের ভোট কেন গুরুত্ব পেলো না? পেয়েছে। কিন্তু পাশ হয়নি তার কারন জানেন? কারণ ৮০ জনের মধ্যে আলাদা আলাদাভাবে ১৫ জন ভোট দিয়েছে আপেল, ১৫ জন ভোট দিয়েছে সমুচাতে, ১০ জন ভোট দিয়েছে দই চিড়া, ১০ জন ভোট দিয়েছে বিস্কুট, ১৮ জন ভোট দিয়েছে পরটা ভাজি, ১২ জন ভোট দিয়েছে কলা আর পাউরুটি। তার মানে কতগুলো ভাগে বিভক্ত হলো বুঝতে পারলেন? 

সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সেই সিঙ্গারাই টিফিনে চলমান থাকলো। 

তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে আগামীর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হোক আরও নির্মল ও সুন্দরভাবে।। এত রক্তের বিনিময়ে আবারও যেন সেই সিঙ্গারাই বাংলাদেশের টিফিনে না আসতে পারে। 


©সংগৃহীত


আজিমপুর গভমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের স্টুডেন্টরা আন্দোলন করলো এতে কিছু শিক্ষককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করানো হলো।  বর্তমানে শিক্ষকদের পদত্যাগ করানোর বিষয়টা যেন একটা ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। 
আজিমপুর গভঃমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে যেসব যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম  গৌতম চন্দ্র পাল স্যার। স্কুলের বেস্ট ম্যাথ আর কেমিস্ট্রি টিচার ছিলেন।  অন্যান্য টিচাররা নিজের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করলেও গৌতম স্যার সব সময় স্কুল নিয়ে চিন্তা করতেন, স্টুডেন্টদের নিয়ে চিন্তা করতেন।

গৌতম স্যারের বিরুদ্ধে যে সব এলিগেশন তারা দাড় করিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম তিনি কোচিং বানিজ্য  করতেন। হ্যাঁ তিনি কোচিং করাতেন। আমরাও কয়েকজর দুই বছর তার কাছে পড়েছি। তিনি কোনোদিন কোন স্টুডেন্টকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো আচারে ইঙ্গিতে নিজের কোচিংয়ে পড়ার জন্য কোনরকম বাধ্য করেনি এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। যাদের ইচ্ছা হয়েছে তারা  স্যারের কাছে পড়তে গেছে,তিনিতো কাউকে জোরপূর্বকভাবে কোচিং করতে বাধ্য করেননি তাহলে এটা বাণিজ্য হলো কিভাবে।

দ্বিতীয়তঃ

 তিনি নাকি প্রশ্ন ফাঁস করেন। আর এই এলিগেশন দিয়েছে সেই স্টুডেন্টরা যারা পরিক্ষার আগের দিন রাতে ইউটিউবে প্রশ্ন পেয়ে সেই প্রশ্নে পরেরদিন পরিক্ষা দেয়৷ হাস্যকর।  আজিমপুর গার্লসের বর্তমান বা প্রাক্তন কোন স্টুডেন্ট কখনোই বলতে পারবেনা যে স্যার কোনদিন সাজেশন দিয়েছেন কাউকে কখনো। একবার পরিক্ষার আগে খুব করে স্যারকে রিকোয়েস্ট করি  স্যার প্লিজ আমাদের একটু সাজেশন দিয়েন। স্যার বলেন আচ্ছা ঠিক আছে, পরীক্ষার আগের দিন দিব। তারপর পরীক্ষার আগের দিন যখন স্যারকে সাজেশন দেওয়ার কথা বলি স্যার বলেন সিলেবাস বের করো সবাই। সবাই অনেক খুশি হয়ে সিলেবাস বের করি আর স্যার বলেন, সিলেবাসটাই সাজেশন।  

স্যার এত ভালো ম্যাথ করাতেন/বুঝাই দিতেন যে গাধাও বুঝবে। যে উপপাদ্য আমরা অনেক ভয় পেতাম সেই আমাকে স্যার উপপাদ্যের  ফ্যান বানিয়ে দিয়েছিলেন কয়েকদিনের মাঝেই। ক্লাস নাইনে থাকা অবস্থায় হাফ ইয়ার্লি এক্সামে আমি ম্যাথে ২৯ পাই, তারপর স্যারের কোচিং এ ভর্তি হই। ফাইনাল এক্সামে আমি ম্যাথে ৯৫ পাই যা ক্লাসে হায়েস্ট ছিল। তখন সবাই বলেছিল হেড স্যারের কাছে পড়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন পেয়েছে। আমি বাসায় যেয়ে স্যারকে বলি স্যার সবাই তো এমন বলে। স্যার বললেন ধুর পাগল সামনের এসএসসি পরীক্ষাতেও এরকম রেজাল্ট কইরো আর কেউ কিছু বলার সাহস পাবে না।

নাইন টেনের দুই বছরে স্যারের কাছে যে কত বেতের বাড়ি খাইছি তার কোন হিসাব নেই।( এখনকার স্টুডেন্টরা হয়তো বলবে কত বড় সাহস আমাদের গায়ে হাত তুলে টিচার হয়ে)  স্যারের একটা অভ্যাস ছিল যারা হোমওয়ার্ক করত না তাদের স্যার কিছুই বলত না। কিন্তু যারা হোম ওয়ার্ক রেগুলারলি করত তারা কোন একদিন না করে আনলেই স্যার রেগে মারতেন। স্যার আমাদের পিছনে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। এমনও অনেক ঘটনা আছে যে  স্যার বলেছেন এক্সট্রা  পড়ানোর সময় নাই। তারপর অনেক রিকোয়েস্ট করায় বলেন, যদি ভোর ছয়টায় আসতে পারো তাইলেই পড়াবো। আমরাও ছয়টায় গিয়ে হাজির।  স্যার হাসতেন আর বলতেন আমার কি একটু রেস্ট লাগে না রে। আবার শুরু করতেন পড়ানো। এমন হাজারো মেমোরিস আছে স্যারের সাথে।
 

তৃতীয়তঃ 

তার ব্যবহার নাকি বাজে ছিল আসলেই? স্যার স্কুলে আসার পর থেকে পদত্যাগ করে আগ পর্যন্ত কোন স্টুডেন্ট/অভিবাকও হয়তো বলতে পারবেনা স্যার তাদের সাথে কোনদিন ধমক দিয়ে  কথা বলেছে খারাপ ভাবে কথা বলেছে বা ধমক দিয়েছে। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও ধৈর্যশীল একজন ভালো মনের মানুষ।
 
এতদিন শুধু শুনেছি zen z এর ২০০৬ এর পরে জন্ম নেওয়া স্টুডেন্টরা বেয়াদব। এ বক্তব্যটি যে সত্যি তা আজিমপুর গার্লস স্টুডেন্টরা প্রমাণ করেছে।একজন গার্ডিয়ানকে দেখলাম স্যারকে গৌতম গৌতম বলে সম্বোধন করছেন। এমন মায়ের সন্তানের কতটা আদব থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন করাও মুর্খের কাজ।

তবে বাইরে থেকে লোকজন আনিয়ে স্টুডেন্টদের গায়ে হাত তোলানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। কিন্তু স্টুডেন্টরা এই ঘটনার আগেই টিচারদের পদত্যাগ করিয়েছে। আর এখন ভিক্টিম সাজছে গায়ে হাত তোলার কারণে পদত্যাগ দাবি করেছে।  

জান্নাতুল ফেরদৌস
এসএসসি ব্যাচ-২০২০

Post a Comment

Previous Post Next Post