কলেজ থেকে বাসায় এসে ঢুকার সাথে সাথেই মা আমাকে উনার হাতের ইশারায় বুঝিয়ে যেন কোন প্রকার শব্দ না করি। আমি চুপিচুপি পা টিপে টিপে মায়ের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে জিঞেস করলাম,
-- কি হয়েছে মা? বাবা কি রেগে আছে?
মা বললো,
~ না, তোর আপুর হোস্টেলে কি যেন ঝামেলা হচ্ছে তাই বাসায় চলে এসেছে। বাসায় আসার পর থেকে না কি খুব মাথা ব্যাথা করছে। এখন ঘুমিয়ে আছে। তুই আর কোন ডিস্টার্ব করিস না...
আমি মার কথা শুনে শুধু মুচকি হাসলাম। তারপর কিছু না বলে আমার রুমে চলে এলাম। পা থেকে মোজা গুলো খুললাম। শেষবার কবে মোজা ধুয়েছি আমার নিজের মনে নেই। নিজের মোজার গন্ধে নিজেই থাকতে পারছি না৷
মোজা গুলো নিয়ে চুপিচুপি আপুর রুমে গেলাম। দেখি আপু হা করে ঘুমাচ্ছে। সুন্দর করে আমার মোজা গুলো আপুর মুখের কাছে রেখে বাহির থেকে আপুর রুম লক করে এসে পড়লাম...
কতক্ষণ পর আপুর রুম থেকে ধুমধুম শব্দ হতে শুরু হলো। মা তাড়াতাড়ি দরজা খুলতেই আপু চিৎকার করে বলতে লাগলো,
- আম্মু তোমায় বলেছিলাম না তোমার এই কুত্তা ছেলে যেন কোনমতেই আমার রুমে না আসতে পারে তারপরও এই কুত্তা আমার রুমে এসে আমার মুখে নোংরা দূর্গন্ধ মোজা গুলো রেখে গেছে। মোজার গন্ধে আমি দম আটকে মরেই যাচ্ছিলাম...
আমি তখন বললাম,
-- মোজা গন্ধ করবে কেন? এই সবেমাত্র ৪০ দিন আগের ধুয়া মোজা তাতেই গন্ধ হয়ে গেলো...
এই কথাটা বলে আমি কোন রকম জীবনটা হাতে নিয়ে আপুর চোখের সামনে থেকে চলে গেলাম তা না হলে আমার পিঠে কয়েকশ ধুমধাম পড়ে যাবে কখন...
বিকালে বাসার বাহিরে বের হচ্ছি সেই সময় আপু ডেকে বললো,
-পিয়াস,ভাই আমার ফোনে একশো টাকা লোড করে দিস তো মনে করে।
আমি আপুর থেকে টাকাটা নিলাম...
সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরি তখন আপু বললো,
- কি রে, তকে সেই বিকেল বেলা বললাম টাকা লোড দিতে। এখনো তুই লোড দিলি না কেন?
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-- তুইই না তখন নিজে থেকে বললি, এই নে ভাই ১০০ টাকা তোর হাত খরচ মন মতো খরচ করিস। তাই তো আমি তো খরচ করে ফেলেছি..
আপু রাগে লাল হয়ে মা কে ডেকে বললো,
- তোমার এই কুত্তা ছেলেকে আমার ফোনে টাকা লোড করতে দিয়েছিলাম। কিন্তু এই বান্দার আমার ফোনে টাকা না দিয়ে নিজে খরচ করে ফেলেছে..
আপুর কথা শুনে মা বললো,
~ তুই তো জানিস এটা এক নাম্বারের চুর আর বাটপার। তারপরও ওকে টাকা দিতে গেলি কেন?
রাতে আপুর রুমে এসে দেখি আপু পড়ছে। আমি আপুকে বললাম,
-- আপু একটু ভিতরে আসবো?
আপু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-তোর মতলবটা কি? কখনো তো আমার রুমে ঢুকার সময় অনুমতি নিস না। আজ হঠাৎ নিচ্ছিস যে...
আমি মাথাটা নিচু করে বললাম,
--আপু আজ আমড় রেজাল্ট কার্ড দিয়েছে। আমি ফিজিক্সে ফেল করেছি...
আপু হাসতে হাসতে বললো,
- বাহ বাহ বাহ খুব ভালো হয়ছে। এখন আমি বাবাকে সব বলে দিবো আর তোকে ইচ্ছে মত মার খাওয়াবো। আরও আসবি আমার সাথে এমন বান্দরগিরি করতে। এখন না বুঝাবো মজা কাকে বলে..
আল্লাহর কি লীলা এমন সময়েই বাবা রুমে এসে ঢুকে আমাকে বললো,
~ কি রে, তোর না আজ রেজাল্ট কার্ড দেওয়ার কথা ছিলো?
আমি বলার আগেই আপু বললো,
- না বাবা এখনো দেয় নি। আর রেজাল্ট কার্ড দেখে লাভ কি? আজকাল কলেজগুলোতে অনেক কঠিন প্রশ্ন করে। আমি পিয়াসের ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি প্রশ্নটা দেখেছিলাম। আমি শিওর কলেজের সবাই এই দুই বিষয়ে ফেল করবে। এতই কঠিন প্রশ্ন হয়ছে ।
বাবা আপুর কথা শুনে আস্তে আস্তে বললো,
~ একটু তো প্রশ্ন কঠিন করেই।
এই কথা বলে বাবা রুম থেকে চলে গেলো। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- তোর মত একটা বোন থাকলে এইদেশে ঘরে ঘরে বিজ্ঞানী তৈরি হতো। কারণ সব বিজ্ঞানীরাই কোন না কোন বিষয় ফেল করেছে।
আমার কথা শুনে আপু আমার পিঠে কষে থাপ্পড় মেরে বললো,
-ফিজিক্সে ফেল করে আবার বিজ্ঞানী হবে। এইবারের মত বাঁচিয়ে দিলাম নেক্সট টাইম আর বাঁচাবো না। এখন যা সামনে থেকে...
২০ মিনিট ধরে আপুর ব্যাগ জিনিসপত্র বহন করে আপুকে গাড়িতে তুলে দিলাম। বাস যখন ছেড়ে যাবে তখন আপুকে বললাম,
- এই আপু দেখলি না এত কষ্ট করে তোর ব্যাগ গুলো নিয়ে এসেছি অল্প কিছু টাকা তো দে..
আপু মুচকি হেসে বললো,
- লজ্জা নাই তোর তুই কি কুলি না কি যে টাকা চাইছিস?
আপুর কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রাগে চলে আসলাম অবশ্য আপু পিছন থেকে ডেকেছিলো কিন্তু আমি শুনি নি...
ঘুম থেকে উঠেই সকাল সকাল আমার ফোনে একটা মেসেজ দেখে চমকে উঠলাম। কে জানি আমার বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে (ভাবতে লাগলাম কেউ ভূল করে পাঠালো না তো আবার)। ভাবতে ভাবতেই তার কিছুক্ষণ পর আপু ফোন দিয়ে বললো,
- কি রে, টাকা পেয়েছিস?
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-- এত টাকা পাঠিয়েছিস কেন?
আপু হেসে বললো,
- তুই না নতুন ফোন কিনতে চেয়েছিলো তাই টিউশনির টাকা পেয়ে তকে দিয়ে দিলাম। আর ৫ হাজার টাকা কয়েকদিন পর দিচ্ছি। তখন ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা নতুন ফোন কিনে নিস...
আমি খুশিতে চিৎকার করে আপুকে বললাম,
-- আপু, প্লিজ আর কিছু টাকা বাড়িয়ে দিস। ১৮ হাজার টাকা দিয়ে নতুন মডেলের একটা ফোন কিনবো...
কিন্তু আপু আমার কোন কথায় শুনে নি। শুধু হ্যালো হ্যালো করতে লাগলো। এমন সময় শুনি কেউ একজন আপুকে বলছে, কি রে আর কত এই নষ্ট টেপ মারা ফোনটা ব্যবহার করবি। এইবার তো নতুন একটা ফোন কিন...
আপুর হাতের ফোনের হয়তো স্পিকারটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমার কথা ও কিছুই শুনতে পারছে না। কিন্তু আমি ঠিকিই আপুর কথা গুলো ক্লিয়ারলি শুনছি...
মুহূর্তের পৃথিবীর মাঝে থাকা সবচেয়ে স্বার্থপর ভাই মনে হলো নিজেকে। বোনের থেকে সবসময় কিছু না কিছু আবদার করতেই থাকি অথচ আমার বোন যে একটা নষ্ট ফোন ব্যবহার করছে দিনের পর দিন সেটা কখনো খেয়ালই করি নি...
আপুর ১০ হাজার টাকা আর আমার পুরাতন ফোন বিক্রি করে ৬ হাজার টাকা আর ২ হাজার টাকা বাবার পকেট থেকে চুরি করে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটা স্যামসাং নতুন মডেলের একটা ফোন কিনলাম...
আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের সামনে। আপুকে ফোন দিয়ে বলেছি নিচে আসতে। আপু নিচে এসে আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললো,
- তকে কতবার বলেছি একটু ভালো করে পড়াশোনা কর কিন্তু তা তো করিস না। এখন নিশ্চয়ই বাবা তকে মেরেছে তাই না?
আমি কিছু না বলে আপুর দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিলাম।
আপু ফোনটা দেখে অবাক হয়ে বললো,
- তুই নতুন ফোন কিনেছিস? কিন্তু বাকি টাকা কোথায় পেলি?
-- পুরাতন ফোনটা বিক্রি করে দিয়েছি আর বাবার পকেট থেকে কিছু টাকা চুরি করেছি...
আপু রেগে গিয়ে বললো,
- কুত্তা তুই চুরি করতে গেলি কেন? আমি তো কয়দিন পর টাকা এমনিতেই পাঠাতাম..
আমি আপুকে বললাম,
-- ফোনটা তোর জন্য কিনেছি। কয়দিন পর আমার পরীক্ষা। এখন ফোন থাকলে পড়া হবে না। ডাক্তার বোনের ভাই পরীক্ষায় ফেল করলে মান ইজ্জত যাবে...
আপু কান্না করছে। আমি আপুকে বললাম,
-- কাঁদছিস কেন?
আপু কাঁদতে কাঁদতে বললো,
- কুত্তা ভাইটা যে বড় হয়ে গেছে তো সেই কষ্টে কান্না করছি পাগল...
আপু এখনো বসে আছে আমি চলে যাচ্ছি। হঠাৎ পিছন ফিরে আপুকে বললাম,
-- আর যদি কখনো টেপ মারা মোবাইল ব্যবহার করিস তোর খবর আছে। মনে রাখিস তোর একটা ভাই আছে...
আমার কথা শুনে আপু হেসে দিলো। চোখে জল আর মুখে মিষ্টি হাসি। খুব অদ্ভুত রকম লাগছে আপুকে..পরের পর্ব গুলো পোস্ট করার সাথে সাথে পেতে এই পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন 👉 Single-লাইফ
#বড়_আপু
#আবুল_বাশার_পিয়াস
যারা প্রতিদিন এমন অসাধারণ সব গল্প পড়তে চান,,তারা পে'জ'টা ফ-লো করে রাখতে পারেন। আমি কথা দিলাম পেজের গল্পগুলা আপনাদের মন ছুঁয়ে যাবে ❤️