গল্প নং -০১
আমার হাসবেন্ট যেদিন আমাদের গ্রামেরই পাশের গ্রামের এক মেয়ের সাথে অনৈতিক কাজ করার সময় হাতে নাতে এলাকাবাসীর কাছে ধরা পড়লো সেদিনই প্রথম এসব ঘটনা আসলে আমি জানতে পারলাম তার আগে এসব কিছু কখনো স্বপ্নেও আসে নাই। এসব কথাবার্তা শুনার পর আমার মাথা রীতিমতো চক্কর দিয়ে উঠলো। আবার নাকি ওই মহিলার জন্য উনি ১২ হাজার টাকার দাম দিয়ে স্মার্ট ফোন নিয়ে দিয়েছে, অথচ আমাদের বাড়িতে এখনও একটা বাটন একটা সেট।
ওই মেয়েকে নিয়ে উনি নাকি প্রায়শই এখানে সেখানে ঘুরতে নিয়ে যায়, অথচ আমি তার ৩ বার কবুল পয়ে বিয়ে করার পরও আমাদের বৈবাহিক সম্পর্কের প্রায় ১০বছরের মাঝেও কোথাও ঘুরতে যাইনি। তবুও আমার স্বামীর সন্দেহজনক কোনোকিছুই আমার চোখে আজ পর্যন্ত কখনো তেমন কিছুই পড়েনি দু'একবার ফোন আসলেও আমার কাছে তা অন্য রকম কিছু মনে হয়নি। তার পিছনের কারণ আমার স্বামীর প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা ছিলো। উনিও কখনো ভালোবাসার বা আদরের কোনো দিক দিয়ে কোন কিছুর কমতি রাখেন নি। তার এমন ঘটনা শুনে আমি প্রায় বোবা হয়ে গিয়েছিলাম কিছুক্ষনের জন্য। আমাদের সংসারে ছোটো ছোটো দুইটি ছেলে-মেয়ে, তাদের নিয়ে আমি কোথায় যাবো কার কাছে গিয়ে দাঁড়াব? শুনলাম গ্রামবাসী নাকি তাদের বিয়ে পড়িয়ে দেবে। আমি আমার স্বামীর ভাগ তো কাউকে দিতে চাইনি, তাহলে এমন কেন হলো? সতীনের ঘর করাটা কোনোদিনই আমি পারব না।
বিয়ে পড়িয়ে ওদের সম্পর্কটাকে জায়েজ করে দিয়েছেন গ্রামবাসী। বাড়িতে বউ নিয়ে এসেই মহিলা আমার পায়ে পড়ে গেল, কাঁদতে কাঁদতে বললো, 'বুবু আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি ভুল করেছি, আমি অন্যায় করেছি। আপনার পায়ে আমাকে একটু ঠাঁই দিন।'
মহিলার কথা শুনে রীতিমতো আমি চমকে গেলাম। আমার স্বামীও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দাওয়ার বাইরে অনেক লোকের সমাগম। আমি কেঁদে ফেললাম। সবার সামনে কোনো ঝামেলা না করে অামার সাজিয়ে রাখা ঘরটাতে ওদের জায়গা করে দিলাম। সন্তানদের নিয়ে আমি থাকতে শুরু করলাম আরেকটা ঘরে।
প্রায়শই সেই ঘর থেকে আমি ওদের মাঝে হাসি মশকরার আওয়াজ শুনতে পায় । আস্তে আস্তে আমারও স্বামীর প্রতি থাকা ভালোবাসা কমতে লাগলো। একদিন আমি নির্জনে একা তাকে ডাক দিয়ে নিয়ে বললাম,
'আমি আপনাদের সুখের ঘরে কাটা হয়ে থাকতে চাই না। আমি চলে যাব।'
আমার কথায় খানিকটা অবাক হয় রাসেল মানে আমার স্বামী, 'তোমার তো এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না মায়া। তারপরেও কেন?'
আমি মাথা নিচু করে বললাম, 'আমাকে আটকানোর চেষ্টা করবেন না দয়া করে। আমি আমার মনের মাঝে আমার পোষা ভালোবাসাটুকু নিয়েই চলে যাব।'
'তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ মায়া? আমি কেমন করে যে এসবে ফেঁসে গেলাম বুঝতেই পারিনি।'
'আপনি আরও অনেককিছুই জানতে পারবেন না। আপনি ভালো থাকবেন, এটাই আমি চাই।'
বিভিন্ন কথা দিয়ে আমাকে আটকানোর চেষ্টা করলেও আমি আমার কথা প্রতি অনড় ছিলাম। সেদিন তাকে শেষ কথা বলেছিলাম যে,
'আমি আপনাকে তালাক দিব না। শুধু আপনার থেকে দূরে চলে যাব। আর দয়া করে আমার দুই পৃথিবীকে আমার কাছে চাইবেন না। কখনো মনে পড়লে আসবেন, নিষেধ থাকল না।'
দুটো সন্তানের অন্তত একজনকে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আমার সন্তানকে তাদের সৎ মায়ের কাছে মানুষ করার মতো অবস্থায় রাখতে চাইনি। হয়তো তারা এখানে ভালো থাকবে কিন্তু মায়ের আদর তো পাবে না। বাবা হয়তো দু'দিন ভালোভাবে কাছে টানলেও পরে মহব্বত কমে যাবে।
আমার সতীন আমার কাণ্ড দেখে মনে মনে খুশি হয়েছিল। রাজার সাথে রাজত্বও পেল বলে। কিন্তু মিথ্যা কান্না করার ভাণ করলো সে। আমার গলা ধরে বললো, 'বুবু আপনি যাবেন না দয়া করে। আমার জন্য আপনি এ সংসার ছেড়ে যাবেন না। দরকার হলে অামিই চলে যাব।'
কিন্তু তার কথার মধ্যে কোনো জোর ছিল না। ছিল না সত্যিকারের কাতরতা। আমি মেকি হেসে তাকে ভাঙা ভাঙা গলায় বললাম,
'তুমি ভালো থেক।'
আমার এক মামাতো ভাই ছাড়া দুনিয়াতে কেউ ছিল না। বাবা-মাকে ছোট বেলায় হারিয়েছি। মামা-মামীর সংসারে বড় হলেও জানতাম না আমার আরও কেউ আছে কিনা। আমার দাদা-দাদী বা চাচা-চাচী।
স্নেহা আর সুমনকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হবার সময় চোখ দিয়ে পানি চলে আসছিল। আমার সাজানো সংসার নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। তিলতিল করে গড়ে তোলা প্রত্যেকটি কোণা যেন আমার দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে কেঁদে কেঁদে বলছে,
'তুমি যেও না মায়া। আমাদের মায়ার ডোরে বেঁধে কোথায় যাচ্ছ?'
তাদের প্রতি হয়তো আমার নিশ্চুপ উত্তর,
'তোমরা আমারই স্পর্শ। তোদের প্রতি আমার ভালোবাসাটুকু কোনোদিনই কমবে না। ভালো থাকিস তোরা।'
কিছুদূর যাওয়ার পর পাঁচ বছরের সুমন বলে উঠলো, 'মা আমরা কোথায় যাচ্ছি?'
আমি মেকি হেসে বললাম, 'তুমি না তোমার মামার বাড়ি যেতে চেয়েছিলে?'
'হুম।'
'সেখানেই যাচ্ছি বাবা।'
'ছোট মা আর আব্বা যাবে না?'
আমি শুকনো গলায় বললাম, 'না বাবা।'
সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। স্নেহার বাবা বিদায়বেলা চোখে পানি সমেত বলেছিলেন, 'কোথায় যাচ্ছ জানাবা কিন্তু। ছেলে-মেয়ে দুটোর খরচ অামি পাঠাব।'
আমি তাকে বলেছিলাম,
'তার আর দরকার হবে না।'
রাত এগারোটা নাগাদ ভাইয়ের বাড়িতে অাসলাম। মামাতো ভাই আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললো,
'কী রে মায়া? হঠাৎ তুই?'
'হ্যাঁ রে।'
'তাও কোনো খোঁজ না দিয়ে!'
'তোর বাড়িতে কয়েকদিন থাকার জায়গা হবে? মাসখানেকের জন্য।'
'কী হয়েছে বলতো বোন?'
আমি সবকথা তাকে বললাম। দাওয়ার উপর পা ছড়িয়ে বসেছিলাম। চোখ দিয়ে আমার পানি অনবরত ছুটছে। ভাইয়ের বউ আমাকে আপাতত এক গ্লাস পানি এনে দিলো। আমি ঢকঢক করে খেয়ে ভেতরে জমে থাকা গরমটাকে ছুটি দিয়ে দিলাম।
মামাতো ভাই জহির তো রেগে আগুন। রাগী ভাব এনে বললো, 'তুই যাই বলিস আপা। আমি কিন্তু মামলা করবো ওর নামে।'
জহিরের বউও তার সাথে সহমত পোষণ করলো। আমি শুকনো হেসে বললাম, 'রাগিস না ভাই। দোষ তো আমার। উনি তো আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেননি। আমি নিজের ইচ্ছায় এসেছি।'
কিছুক্ষণ পর জহিরের বউ ভাত এনে সামনে রাখলো। ভাত দেখে ভেতরের ক্ষুধা জেগে উঠলো। গত এক মাসে শান্তি করে খেতে পারিনি। গোস্ত, মাছ, পোলাও রান্না করলেও গলা দিয়ে নামেনি। আজ ডাল ভাত দেখেই যেন পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো। গপগপ করে খেতে শুরু করলাম। স্নেহা আর সুমনকেও খাইয়ে দিলাম।
আমার এমন করে খাওয়া দেখে জহির অবাক হয়ে বললো, 'আপা আস্তে খাও। গলায় আটকাবে তো।'
আমি তার কথায় কর্ণপাত না করে খাবারটুকু শেষ করে পানি ঢকঢক করে খেয়ে বললাম,
'জানিস ভাই, কতদিন পর শান্তি করে ভাত খেলাম? গোস্ত, মাছ আমার পেটে ঢোকে না রে। ওই বাড়ির সবকিছু বিষ লাগে। তোর বাড়িতে দিবি থাকতে? মাসখানেকের জন্যে।'
'আপা, আমি গরিব হতে পারি, দিনে আনি দিনে খাই। তবুও তোকে পুষতে পারব না এমনটা হতে পারে? তুই তো ছোট থেকে আমাকে মানুষ করেছিস। আমরা যা খাই তুইও তাই খাবি।'
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, 'আলহামদুলিল্লাহ।'
চলবে.....??
গল্প: পদ্ম পাতায় জল
পর্ব: ১
সাজ্জাদ আলম সাইফুল ইসলাম
আপনারা সবাই ১ম পর্বে অবশ্যই রেস্পন্স করুন। আমি কথা দিলাম পুরো গল্পটাই পোস্ট করার চেষ্টা করব। তাই যারা পুরো গল্পটা পড়তে চান, তারা নিশ্চিন্তে পেজটা 'ফ''লো' করে রাখতে পারেন ❤️
গল্প নং -০২
'বিয়ের ২বছর যেতে-না যেতেই আমার শালির সঙ্গে আমি পরকীয়াতে আসক্ত হই।
'বেশ ভালোই যাচ্ছিলো দিন গুলি। বউয়ের চোখ ফাকি দিয়ে আমরা দেখা করতাম।
শারীরিক ভাবে মেলা-মেশাও করতাম।
'হঠাৎ একদিন শালি বলে উঠলো।
জান আমরা বিয়ে করছি কবে। তোমাকে ছাড়াতো আমি থাকতে পারিনা।
'আরে তোমার বোন থাকতে তোমাকে কিভাবে
বিয়ে করবো এখন।
'ওরে ডিভোর্স দাও।
আর আমাকে ঘরের বউ করে তুলো।
'পাগল হইছো নাকি হ্যা।
এই সব করলে মানুষ কি ভাব্বে জানো তুমি।
'তাহলে কি করবা ওকে মেরে ফেলবা নাকি।
'প্রয়োজন হলে সেটাই করবো।
এর পরে তোমাকে বিয়ে করবো আমি।
'এই হাসিব শোন আমার মাথায় একটি প্লান এসেছে।
প্লানটি হলো আমার বোনতোর তো হার্টের সমস্যা
আছে তাইনা।
'হ্যা।
'আমার বোন যখন রাতে ঘুমিয়ে যাবে তখন তুমি
বালিশ দিয়ে ওর মুখ চুপে ধরবে যেনো
সেখানেই মরা যায়।
'আরে কেউ যদি জানতে পারে তখন।
'আরে পাগল বলবো ওর হার্ট সমস্যা ছিলো।
হঠাৎ হার্ট এটার্ক করে মারা গিয়েছে।
'উফ' প্লানটি তো সেই।
ঠিক আছে আমি আজকেই এমন করবো।
'হ্যাঁ জান।
'এর পরে হাসিব রাতের আধারে তার বউকে বালিশ চাপা দিয়ে সেখানেই মেরে ফেলে?
পরের দিন যখন সবাই যখন বলে ও কিভাবে মারা গেলো?
তখন হাসিব বলে আমার বউয়ের হার্ট এর সমস্যা ছিলো। কাল রাতে হঠাৎ বুকের ব্যাথা শুরু হয় আর সেখানেই মারা যায়।
'হাসিবের এই মিথ্যা কথাটি সবাই বিশ্বাস করে।
একটুও অবিশ্বাস করেনা।
'এর ঠিক ২ মাস পরে হাসিব তার শালি শিমলাকে বিয়ে করে এবং সবাইকে জানিয়ে দেয়।
এমন দেখে শিমলার বাবা-মা ও বেশ খুশি হয়। কারন
হাসিব একজন ভদ্র ছেলে।
এবং প্রতিষ্টিত।
'পরবর্তীতে হাসিব আর শিমলা ভালোভাবেই সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে লাগলো।
দেখতে-দেখতে ৪টি বছর কেটে গেলো কিন্তু শিমলার গর্ভে কোন সন্তান আসেনা।
'ডাক্টারের কাছে গেলে ডাক্তার বলে আপনার বউ কখনো মা হতে পারবেনা।
এই ভাবে আরো ২ বছর যাওয়ার পরে হাসিব শিমলাকেও ডিভোর্স দিয়ে দেয়।
কারন সে কখনো মা হতে পারবেনা। হাসিবকে বাবা ডাক শোনাতে পারবেনা।
এই কারনেই বিচ্ছেদটা হয়েই যায়।
'আমাদের সমাজে বতর্মান এমন অনেক হচ্ছে।
বউ থাকতেও শালির সঙ্গে সম্পর্কে জরায়।
'সত্যি আল্লাহ্ ছাড় দেয়।
কিন্তু ছেড়ে দেয়না।
অনুগল্প: ভূল_ডিসিশন
কাহিনী ও লেখনীতে: মি_হাসিব